আলফা আলফা
ঘাস চাষ পদ্ধতি
ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার
গবাদিপশুর দৈনিক খাদ্য তালিকার প্রধান উপাদান হলো কাঁচা ঘাস। প্রবাদ আছে “গাভীর মুখে দিলে ঘাস, দুধ পাবে বারো মাস”। গবাদিপশুর স্বাস্থ্য রক্ষা, দুধ উৎপাদন ও বৃদ্ধির জন্য ঘাস প্রয়োজন। দেশি ঘাসের উৎপাদনও কমে গেছে, তাই উন্নত জাতের অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঘাসের চাষ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আলফা আলফা ঠিক তেমনই একটি উৎকৃষ্ট মানের ঘাস। এ ঘাসকে পশু খাদ্যের “রাণি” বিবেচনা করা হয়।
এ ঘাসের অপর নাম “লুছার্ন”। ইহা একপ্রকার লিগুম জাতীয় ঘাস। একবার চাষ করলে ৪-৫ বছর পর্যন্ত ঘাস সংগ্রহ করা যায়। এ ঘাসের উৎপত্তি পশ্চিম এশিয়াতে তবে ইরানে প্রথম চাষ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। পৃথিবীর সব দেশেই চাষ করা হয়ে থাকে। তবে আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে বেশি উৎপাদিত হয়।
এ ঘাস অতিরিক্ত গরম বা ঠা-া সহ্য করতে পারে না। ইহা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। শীতকালের যে কোন সময় বপন করা যায়। তবে অক্টোবর জানুয়ারি হলো উত্তম সময়।
রোপণ পদ্ধতি
জলাবদ্ধ জমি ছাড়া যে কোন জমিতে চাষ করা যায় তবে দো-আঁশ মাটি উপযুক্ত।
শুকনো জমিতে ভালভাবে চাষ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর সার দিতে হবে এবং মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে। একর প্রতি ৫০ কেজি টিএসপি সার চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
এ ঘাসের বীজ ছিটিয়ে বা সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা যায়। ছিটিয়ে বপন করলে একরপ্রতি ৫-৭ কেজি এবং ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে রোপণ করলে ৪-৬ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। প্রতি গর্তে ৩-৪টি বীজ দিতে হবে এবং একটি থেকে আরেকটি গর্তের দূরত্ব ৫ সেন্টিমিটার। ১-২ সেন্টিমিটার গভীরে রোপণ করতে হয়। তবে বীজ বপনের আগের দিন বিকালে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বীজের মুখ ফেটে গেলে চারা গজাতে সুবিধা হবে। বীজ থেকে চারা না হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহেই সেচ দিতে হয়। তবে পরবর্তীতে ২১ দিন পরপর সেচ দিলেই চলে।
এ ঘাস ডালজাতীয় (লিগুম) ঘাস তাই নাইট্টোজেন সংযোজন ব্যাকটোরিয়া বাতাস হতে প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সংযোজন করতে পারে। তাই পানি সেচের পর প্রতি একরে ৮ কেজি ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করলে উৎপাদন বেশি হবে।
ঘাস কাটার নিয়ম
প্রথম বার ফুল ফোটার সময় কাটতে হয় এবং পরবর্তীতে ৩৫-৪০ দিন পরপর ঘাস কাটতে হবে। ২-৩ ইঞ্চি উপরে হতে ঘাস কাটতে হয়। এতে অপচয় কম হয় এবং পরবর্তীতে ফলনও বেশি হয়। বছরে ৮-১০ বার ঘাস কাটা যায়। একর প্রতি উৎপাদন প্রায় ২৫-৩০ মে.টন/বছর।এ ঘাসের বড় সুবিধা হলো এর পুষ্টি উপাদান অন্য যে কোন খাবারের চেয়ে দ্রুত শরীরে শোষিত হয়।
পুষ্টি উপাদানসমূহ
ড্রাই ম্যাটার ২০%; ক্রড প্রোটিন ২১-২৩%; ক্রড ফাইবার ২৬.৬%; ক্রড ফ্যাট ২.৯%; নিউট্রাল ডিটারজেন্ট ফাইবার ৩৯.৩%; আঁশ ১১.৫%; লিগনিন ৭.৬%; হজমযোগ্য এলার্জি ১১.৯%; গ্রস এনার্জি ১৮.১ মেগাজ্জল/কেজি; ক্যালশিয়াম ১৯.৪%; ম্যাগনোশিয়াম ৭৬ মি. গ্রাম/কেজি।
আলফা আলফা ঘাসে সরগম ঘাস অপেক্ষা ৫ গুণ বেশি আমিষ এবং ভিটামিন বিদ্যমান। গবেষণায় জানা গেছে ফুল ফোটার আগে কাটলে ঘাসে আমিষ ৩% অন্যান্য পুষ্টি ১৭.৪% এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম কেরোটিন এবং সামন্য পরিমাণে ফসফরাস থাকে। উচ্চমাত্রার বিটা কেরোটিন ও ভিটামিন গরুর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ঘাস খাওয়ানোর নিয়ম গাভীর দৈহিক ওজন ১০০ কেজি হলে দৈনিক খাদ্য তালিকার ০.৭৫ কেজি দানাদার, ১ কেজি শুকনা খড় এবং ৪ কেজি কাঁচা আলফা আলফা ঘাস সরবরাহ করা উচিত। গাভীকে ইউএমএস খাওয়ালে ০.৫ কেজি দানাদার ২.৫-৩ কেজি কাঁচা আলাদা আলাদা ঘাস এবং ২ কেজি ইউএমএস দিলেই হবে। এই হিসাব অনুযায়ী গাভীর ওজন অনুপাতে খাদ্য নির্ধারণ করে অর্ধেক সকালে, অর্ধেক অংশ বিকালে খেতে দিতে হবে।
সংরক্ষণ পদ্ধতি
ঘাসে ফুল হওয়ার আগেই কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে “হে” আকারে সংরক্ষণ করা যায়, কাঁচা ঘাস ২-৩ দিন উল্টিয়ে পাল্টিয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। কোনভাবেই যেন আর্দ্রতা ১৪% বেশি না থাকে।
সতর্কতা
এ ঘাসে কিছু পরিমাণে ব্লোটিং এজেন্ট, ফাইটোস্ট্রজেন এবং স্যাপোনিন থাকে। কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর আগে কয়েক ঘণ্টা রৌদ্রে রেখে দিতে হবে। প্রজনন করানোর ১৫ দিন আগে এবং পরে ৭ দিন এ ঘাস অধিক পরিমাণে খাওয়ানো উচিত নয়। (তথ্য সূত্র : ইন্টারনেট/ ডিএলএস পুস্তিকা)
লেখক : ভেটেরিনারি অফিসার, জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ঝিনাইদহ, মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬, ই-মেইল : suzan.dof@gmail.com